সোলেন ব্যাবহার করে বিস্কুট, পাস্তা, নুডুল বা রুটি এমনকি কৃত্রিম মাংস বা মাছ তৈরি সম্ভব।

সোলেন -“বাতাস থেকে তৈরি প্রোটিন”!

by Suborna Kabir Jyoti

ফিনল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী ‘বাতাস থেকে তৈরি করছেন প্রোটিন’ খাবার। বিজ্ঞানিরা বলেছেন- পুষ্টিগুণের দিক থেকে এই খাবার সয়া’র প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে। এই নতুন প্রোটিনের নাম দেওয়া হয়েছে “সোলেন” যা খেতে একদমই স্বাদহীন।

স্বাদহীন প্রোটিন “সোলেন”!

ইলেক্ট্রোলাইসিস ব্যবহার করে পানি থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করা হয়। সেই হাইড্রোজেন , বাতাস থেকে নেওয়া কার্বন-ডাইওক্সাইড ও খনিজ পদার্থ মাটিতে পাওয়া যায় এমন এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়াকে খাইয়ে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরি করেছেন বিজ্ঞানিরা। ‘সোলেন’ নামের এই প্রোটিন খাদ্যটি খেতে স্বাদহীন। এবং এই খাদ্য সরাসরি খাওয়ার জন্য নয়, বরং অন্যান্য খাবারের সাথে যুক্ত করে খেতে পারবেন তাতে খাবারের পুষ্টিগুন বাড়ানো যাবে। আর বিজ্ঞানীরা ঠিক এমনটাই চাচ্ছিলেন।

এছাড়াও, সোলেন ব্যবহার করে নুডুলস, পাস্তা, রুটি এবং বিস্কুট এমনকি কৃত্রিম মাছ বা মাংস বানানো সম্ভব। আর শুধু মানুষ নয় গবাদিপশুর খাবারও হতে পারে এই প্রোটিন। এবং ইতিমধ্যে শোনা যাচ্ছে, সয়া’র প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে ‘সোলেন’। কারণ, সয়া পুষ্টিগুনের দিক থেকে অনেক উন্নত যা মাছ , মাংস এর বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্য। কিন্ত, সয়াবিন চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণে জমি ও পানি লাগে যা প্রচুর খরচ এবং শ্রমের ব্যাপার। সে তুলনায়, সোলেন তৈরিতে কম জমির ব্যবহার এবং ব্যাক্টেরিয়া বা অণুজীব দিয়ে প্রোটিন তৈরিত্র দশভাগের একভাগ পানি লাগবে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারলে এই প্রোটিন তৈরি খচর আরো কম হবে।

বিজ্ঞানীরা কী ধরণের ধারণার উপর ভিত্তি করে এই খাদ্য তৈরি করছেন?

ফিনল্যান্ডের ‘সোলেন’ উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা Pasi Vainikka । তিনি যুক্তরাজ্যের Cranfield University থেকে পড়ালেখা করেছেন। তিনি বলেন, এমন খাবার উতপাদন প্রযুক্তির ধারণা সেই ষাটের দশকে প্রথম আসে। মহাকাশযানে ব্যবহার করার জন্য এমন প্রযুক্তির শুরু। এছাড়া তিনি বলেছেন, তার কাজে তিনি কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে আশা রাখছেন ২০২২ সালের মধ্যেই তারা কাজ শেষ করতে পারবেন। এই প্রোজেক্টের জন্য তারা ফান্ড তৈরি করেছেন। এখন পর্যন্ত ৫৫ লক্ষ ইউরো যোগাড় হয়েছে। এবং ২০২৫ এর মধ্যে তারা ফ্যাক্টরি পর্যায়ে “সোলেন” তৈরির কাজ শুরু করবেন।

Pasi Vainikka বলেছেন- বিদ্যুৎ এর দাম এখানে বড় একটি বিষয়। তবে, সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি যেভাবে সামনে এগোচ্ছে তাতে করে বিদ্যুৎ এর দাম হয়তো ভবিষ্যতে কিছুটা কমে আসবে। তাই সোলেন উৎপাদনে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি ব্যবহারেই আমার আগ্রহ বেশি।

যদি পরিকল্পনা অনুযায়ীও এগোতে পারেন বিজ্ঞানীরা তবুও বিশ্বের চাহিদা মেটানোর মতো বিশাল পরিমাণে প্রোটিন উৎপাদন সম্ভব হতে বহু বছর লেগে যাবে। আর তাছাড়া পরিকল্পনা ব্যর্থও হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী বলা যায়, সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় যেমনটা দেখেছি একদিন হয়তো সেরকম কৃত্রিম মাছ, মাংস খাবে মানুষ। কৃত্রিম খাবার তৈরির ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য এটিকে একটি ধাপ বলা যেতে পারে।

পৃথিবীর আয়ু কিছুটা বাড়বে?

পরিবেশবাদী ক্যাম্পেইনার জর্জ মনবিয়ট এই প্রোটিন উৎপাদনকারী প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “খাদ্য উৎপাদনজনিত কারণে পৃথিবী দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে পৃথিবীর আয়ু , জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে ক্রমশ। খামার গুলো পৃথিবীর বন্য প্রাণীকুল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অগ্রবর্তী কারণ।” গবাদিপশু লালনপালন করে মাংস বা অন্যান্য প্রোটিন জাতিয় খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে ব্যাপক পরিমাণে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। যা বৈশ্বিক উষ্ণতার অনেক বড় একটি উৎস।

“তবে আশার আলো যখন প্রায় নিভে যাচ্ছে এরকম একটি সময়ে এসে ‘কৃষি বিহীন খাদ্য’ উৎপাদন এই গ্রহ এবং তার মানুষকে রক্ষায় বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।” সাময়িকভাবে প্রোটিন জাতিয় খাবারের বদলে সবজি-জাতিয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস পৃথিবীর আয়ু কিছুটা বাড়াতে পারে বলে তিনি মনে করেন। (সুত্র- বিবিসি বাংলা)

For the News that matter to you- Tap this link  Newsretina.com

Related Posts

Leave a Comment

NewsRetina