Connect 2021- এ ফেসবুকের CEO Mark Zuckerberg ফেসবুকের নতুন নাম ‘Meta’ ঘোষণা করেন। তিনি মূলত “Metaverse” নামে একটি Virtual World তৈরির পরিকল্পনা এর কথা উল্লেখ করেছেন- যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল পরিবেশে VR Headsets ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি, গেইম খেলা ও যোগাযোগ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেছেন – ‘যে আমরা যা কিছু করছি এবং ভবিষ্যতে করবো, সেটা বিদ্যমান ব্রান্ডটি সম্ভবত উপস্থাপন করতে পারছেনা, তাই পরিবর্তন দরকার। “আমার ধারণা ভবিষ্যতে ইন্টারনেটই ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রে পরিনত হবে। তাই আগামীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে নয়, ফেসবুককে Metaverse কোম্পানি হিসেবে দেখতে শুরু করবে মানুষ। আর আমরা সামনে যা তৈরি করতে যাচ্ছি, সেটার উপর ভিত্তি করেই আমাদের কাজ ও পরিচয় গড়ে উঠবে।
Mark Zuckerberg আরো বলেন – “আমরা এখন আমাদের ব্যবসাকে দুটি ভিন্ন অংশ হিসাবে দেখছি, একটি অংশ আমাদের অ্যাপস পরিবারের জন্য এবং আরেকটি অংশ ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্মে কাজের জন্য।” আর এর অংশ হিসাবে আমাদের সময় এসেছে একটি নতুন কোম্পানি ব্র্যান্ড গ্রহণ করা। যেন আমরা “যা কিছু করি, বা আমরা কে এবং আমরা কি তৈরি করতে চাই” এই বিষয় গুলোকে প্রতিফলিত করে।
মেটাভার্স মূলত কী?
মেটাভার্সকে আপনি ইন্টারনেটকে জীবন্ত করে তোলা বা 3D Virtual World বলতে পারেন। Zuckerberg-এর ভাষায়- এটি এমন একটি ভার্চুয়াল জগত যার মধ্যে আপনি প্রবেশ করতে পারবেন। আসলে মেটাভার্স একটি অন্তহীন জগত। এখানে পরস্পর সংযুক্ত সমাজ থাকবে- যেখানে মানুষ তাদের পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা করতে পারবে, কাজ করতে পারবে, গেইম খেলতে পারবে ইত্যাদি।
এসব কাজ তারা করতে পারবে Virtual reality তে- VR Headsets, Augmented reality glasses, Smartphone App কিংবা অন্যান্য ডিভাইস এর মাধ্যমে। ফোনের ক্রিন বা কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে VR Headset লাগিয়েই আপনি আপনার প্রিয় Website গুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। মেটাভার্সে অনলাইন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্র, যেমন কেনাকাটা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও যুক্ত হবে।
মেটাভার্সে কি কি করতে পারবেন!
এই Covid-19 এর সময়ে বাড়িতে বসে যারা হোম অফিস করবে তাদের কাজ করার ধরনেও পরিবর্তন আনতে পারবে মেটাভার্স। এ জগতে সহকর্মীদের শুধু মাত্র ভিডিওকলে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে না কাউকে, কর্মীরা ভার্চুয়াল অফিসেও যোগ দিতে পারবেন। কোম্পানিগুলোর জন্য Horizon Works Room নামক সফটওয়্যার চালু করেছে ফেসবুক। এটি ব্যবহার করতে হবে ফেসবুকের Oculus VR Headset দিয়ে। যদিও এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া খুব একটা ইতিবাচক নয়। Oculus Headset-এর মূল্য ৩০০ ডলার বা তারও বেশি। যা মেটাভার্সকে করে তুলেছে ব্যয়বহুল।
এর ফলে অনেকেরই নাগালের বাইরে চলে যাবে মেটাভার্স। তবে যারা টাকা খরচ করে এই হেডসেট কিনতে পারবেন, তারা বিভিন্ন কোম্পানির বানানো Avatar ব্যবহার করে Virtual World ঘুরে বেড়াতে পারবেন। তবে কোম্পানিগুলো তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করবে, তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এছাড়াও ভার্চুয়াল কনসার্টে যাওয়া, অনলাইনে ঘুরতে যাওয়া, শিল্পকর্ম দেখা বা সৃষ্টি করা কিংবা কেনা- সবই করতে পারবেন মেটাভার্সের দুনিয়ায়।
কেন এতো আলোচনা?
Digital World এবং Augmented Reality নিয়ে মাঝে মধ্যেই জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়। আবার কিছুদিন পর সেই উত্তেজনা হারিয়েও যায়। তবে এবার প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে Metaverse নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যেহেতু এই প্রযুক্তি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠছে সে কারণে কেউ এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে চায় না।
এর কারণ এই প্রথমবারের মতো এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে প্রযুক্তিবিদরা মেটাভার্স প্রযুক্তি আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। VR Gaming এবং Internet সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতির কারণেই এই ধারণা তৈরি হয়েছে।ফেসবুক যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সেই তালিকার উপরের দিকেই রয়েছে মেটাভার্স প্রযুক্তি।
এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রধান Mark Zuckerberg বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তার প্রতিষ্ঠান Metaverse প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। Microsoft, Apple, Google, Roblox এবং Fortnite নির্মাতা Epic Games কোম্পানিও মেটাভার্স তৈরিতে কাজ করছে। বিনিয়োগ করেছে প্রচুর অর্থ।বিভিন্ন ভোক্তাপণ্যের ব্র্যান্ডও এই ট্রেন্ডে নাম লেখাতে চাইছে। ইতালিয়ান ফ্যাশন হাউস গুচি গত জুনে Roblox-এর সঙ্গে যৌথভাবে শুধু-ডিজিটাল পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। Coca-Cola ও ক্লিনিক মেটাভার্সের জগতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ডিজিটাল টোকেস বিক্রি করেছ।
আর কতো দূর?
ইউরোপে এই মেটাভার্স প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য ফেসবুক সম্প্রতি ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। বিনিয়োগ করছে প্রচুর অর্থ। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জন্য তারা তৈরি করেছে অকুলাস হেডসেট যা প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর সেটের তুলনায় দামে কম। এবং গত কয়েক বছরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে।
কিছু হেডসেট তৈরি হয়েছে যা মানুষের চোখের সঙ্গে এমন চালাকি করতে পারে যে আপনি যখন ভার্চুয়াল পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবেন তখন মনে হবে সবকিছু থ্রিডি-তে দেখতে পাচ্ছেন। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মেটাভার্স প্রযুক্তি তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি আরো দ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ফাইভ-জি বাজারে আসার পরেই, সব সমস্যার সমাধান ঘটবে।
ভালো দিক গুলোর সাথে মেটাভার্স কিছু বিতর্কের প্রসঙ্গও হয়ে উঠেছে-
জাকারবার্গের মেটাভার্স কিছু বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। ফেসবুকে মানুষের অ্যাকাউন্ট, ছবি, পোস্ট ও প্লেলিস্টের মালিকানার ধারণাই পাল্টে যাবে মেটাভার্সে। অনেকের ধারণা, মেটাভার্সের মাধ্যমে ফেসবুক আমাদের আরও বেশি তথ্য হাতিয়ে নেবে। মানুষ ইন্টারনেটে সহজে ঘোরাঘুরি করতে চায়। তবে সেইসঙ্গে এ-ও চায়, তাকে যেন ট্র্যাক এবং পর্যবেক্ষণ করা না হয়। এখন ধারণা করা হচ্ছে ফেসবুক এমন এক ব্যবসা-মডেল দাঁড় করাতে চায় যা চলবে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
এসব তথ্য ব্যবহার করে ফেসবুক মেটাভার্সে বিভিন্ন টার্গেটেড বিজ্ঞাপন প্রচার করবে। এবং সম্প্রতি স্বয়ং জাকারবার্গই বলেছেন যে, বিজ্ঞাপন তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়েই থাকবে। সেইসঙ্গে এটি খুব সম্ভব মেটাভার্সেরও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে থাকবে বলে স্বীকার করে নেন তিনি। সামনে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য আরও বেশি করে ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যেতে পারে বলে উদ্বিগ্ন অনেক বিশ্লেষক। তাদের আশঙ্কা, এসব তথ্যের অপব্যবহার ঠেকানো ভীষণ কঠিন হবে। অনেকেরই সন্দেহ, মেটাভার্সের মূল্য উদ্দেশ্য ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা।
ভিআর বিশেষজ্ঞ ভেরিটি ম্যাকিনটশের ধারণা, ভিআর বা এআর প্রযুক্তিতে ফেসবুকের বড় বিনিয়োগের একটা বড় কারণ হলো ‘গ্রাহক ডাটা’। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া যায়। যেকোনো ডাটা ব্যবসায়ীর জন্য এটি রীতিমতো সোনার খনি। এছাড়াও ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভার্চুয়াল জগৎকে নিজেদের উপনিবেশ বানিয়ে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ম্যাকিনটশ।
For the News that matter to you- Tap this link Newsretina.com